বাংলাদেশে সৌরশক্তির বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ঢাকায় অফিস খোলার পরিকল্পনা করছে চীনের অন্যতম বৃহৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান লংজি গ্রিন এনার্জি টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি শুধু সৌর প্যানেল সরবরাহই নয়, বরং বড় আকারে বিনিয়োগ করে দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চায়। গত শুক্রবার চীনের শানসি প্রদেশে লংজির প্রধান কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ম্যানেজার জেসন ঝাও সফররত বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এ পরিকল্পনার কথা জানান। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
চীনা নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রতিষ্ঠান লংজির বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিকল্পনা দেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। বিশেষ করে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামীণ বিদ্যুৎব্যবস্থা উন্নত করা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো এবং শিল্প খাতকে শক্তিশালী করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিনিয়োগ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে এবং দেশের বিদ্যুৎ সংকট অনেকাংশে কমে আসবে।
বৈঠকে জেসন ঝাও জানান, লংজি ঢাকায় একটি অফিস স্থাপন করতে চায়, যা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের বাজার বিশ্লেষণ, বিনিয়োগনীতি মূল্যায়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অংশীদারত্বের সুযোগ খুঁজবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সৌরশক্তির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা উন্নত প্রযুক্তির সৌর প্যানেল সরবরাহ করতে চাই, যা দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিনিয়োগ ও কারিগরি সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি : জেসন ঝাও আরও জানান, লংজি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সরাসরি কাজ করতে চায় এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ ও কারিগরি সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। আমরা বাংলাদেশে শুধু সৌর প্যানেল সরবরাহ করেই থেমে থাকতে চাই না, বরং দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করে জ্বালানি খাতে বড় পরিবর্তন আনতে চাই।
ড. আবদুল মঈন খান বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য টেকসই জ্বালানি অত্যন্ত জরুরি। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার ঘটানো এখন সময়ের দাবি। দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। এক্ষেত্রে সৌরশক্তির প্রসার ঘটানো হলে শুধু পরিবেশগত দিক থেকেই লাভজনক হবে না, বরং দেশের বিদ্যুৎ খাতেও বিপ্লব ঘটবে।
ড. মঈন খান বিশেষভাবে কৃষি খাতে সৌরশক্তির সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, সৌরশক্তি দেশের সেচব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব, যা সরাসরি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে সৌর প্যানেলের স্থাপন ব্যয় ৯০ শতাংশ কমে গেছে, যা এই প্রযুক্তিকে আরও সহজলভ্য করেছে। পাশাপাশি ২৫ বছর স্থায়িত্বের কারণে এটি প্রচলিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তুলনায় বেশি লাভজনক।
তিনি আরও বলেন, যদি বিএনপি আগামী নির্বাচনে সরকার গঠন করতে পারে, তবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ছাড়া দেশের কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাই।
তিনি লংজিকে ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা নিয়ে আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করব।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে ১১ দিনের সফরে বর্তমানে চীনে রয়েছেন। প্রতিনিধি দলে আটটি রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও রয়েছেন। প্রতিনিধি দলে আছেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, বাবুল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান মো. শহীদুল ইসলাম রুবেল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান এজেডএম ফরিদুজ্জামান, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদ খান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক মো. নাহিয়ান সাজিদ খান, ডিপ্লোমেটিক করেস্পন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিকাব) সাধারণ সম্পাদক দৈনিক আমাদের সময়ের কূটনৈতিক প্রতিবেদক মো. আরিফুজ্জামান মামুন, বার্তা সংস্থা ইউএনবির বিশেষ প্রতিনিধি আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা আলী আহসান জোনায়েদ, রাফে সালমান রিফাত ও মুখপাত্র রিয়াজ হোসেন।