আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোয় খেলাপি ঋণ বেপরোয়া গতিতে বেড়েছে। আর্থিক খাতে সুশাসন না থাকায় ব্যাপকভাবে বড় বড় জাল-জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের প্রায় সবই খেলাপি হয়ে গেছে। যে কারণে মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। ২০০৯ সালের শুরু থেকে গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাতে বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোয় বেড়েছে ২৪ হাজার ১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে খেলাপি ঋণের এমন চিত্র পাওয়া গেছে। ব্যাংকাররা মনে করেন, খেলাপি বৃদ্ধির প্রকৃত অবস্থা এই চিত্রের চেয়েও বেশি ভয়াবহ। কারণ খেলাপির প্রকৃত চিত্র এতে ফুটে ওঠেনি। অনেকে ঋণখেলাপি হওয়ার যোগ্য হলেও তা খেলাপি করা হয়নি। নিয়মের বেড়াজালে প্রলেপ দিয়ে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এখন সেগুলো প্রকাশ পাচ্ছে। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে ২০০৯ সালের শুরুতে। তারা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় ছিল। ওই সময়ে আর্থিক খাতের খেলাপি ঋণে আওয়ামী লীগ সরকারের দায় রয়েছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এবং ২০০৯ সালের শুরুতে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সাড়ে ৮ গুণ বেড়েছে।
ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোয় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বা ২০০৯ সালের শুরুতে খেলাপি ঋণ ছিল ৭১০ কোটি টাকা। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ১ কোটি টাকা বা প্রায় ৩৫ গুণ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ২৪টি বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর বড় অংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে।