স্বাধীন ভুখণ্ড প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছর পরও প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য রক্ত ঝরাতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।
মেক্সিকোতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মিলনায়তনে আয়োজিতআলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। মেক্সিকোর বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে বুধবার (২৬ মার্চ) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
মেক্সিকোতে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫ উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস, মেক্সিকো সিটি আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে মেক্সিকোতে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও প্রবাসীরা অংশগ্রহণ করেন।
আয়োজিত কর্মসূচির প্রথম পর্বে সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। এরপর দূতাবাসের মিলনায়তনে এক বিশেষ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়, যেখানে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘১৯৭১ সালের এই দিনে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছি। মুক্তিযুদ্ধের মূল অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৫ মার্চের কালরাতে, যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বের দাবিদার সেই নেতা পাকিস্তানের আতিথেয়তা গ্রহণ করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ি জমান। অথচ দেশমাতৃকা রক্ষায় দীপ্ত শপথ নিয়ে সেদিনের মেজর জিয়াউর রহমানই সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিশেহারা জাতিকে পথ দেখান এবং তিনি নিজেও সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আর স্বাধীনতার পর ওই নেতার অনুসারীরা, যারা কলকাতায় বিলাসী জীবনযাপন করছিল, দেশে ফিরে এসে তারা বীরদর্পে সার্টিফিকেট গ্রহণ করে রাতারাতি মুক্তিযোদ্ধা বনে যান।’
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জুলাই ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান আমাদের জন্য নতুন আশার সঞ্চার করেছে। জনগণের শক্তিকে কখনো দমন করা যায় না। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। প্রতিবেশী দেশের প্রায় ৪৯টি মিডিয়া দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালেও জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির সামনে তা ব্যর্থ হয়েছে।’
রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘গণতন্ত্র ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাজনৈতিক দল ও সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমাদের এই ঐক্যের ধারা আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং সত্যিকারের গণতান্ত্রিক, মানবিক ও মর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট সদস্যরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গুরুত্ব তুলে ধরেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। এ ছাড়া দূতাবাসের মিলনায়তনে জুলাই অভ্যুত্থানকে উপজীব্য করে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
দেশ ও জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের সম্মানে বিশেষ ইফতার পরিবেশন করা হয়।