ইসলাম ডেস্ক : দোয়া একটি পৃথক ইবাদত। হাদিস শরিফে দোয়াকে ইবাদতের মগজ বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহর কাছে চায় না, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হন।’ অন্য হাদিস শরিফে এসেছে, ‘কেবল দোয়ার মাধ্যমেই ভাগ্য পরিবর্তন হয়।’ এ জন্য সারা বছরই দোয়ার এহতেমাম করা চাই। তবে রমজানে দোয়া করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে । রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো- ইফতারের সময়। (এ সময় নেক দোয়া কবুল হয়)। অন্যটি হলো (কিয়ামতের দিবসে) স্বীয় প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (বুখারি ও মুসলিম)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না- ১. রোজাদারের দোয়া ইফতার করা পর্যন্ত, ২. ন্যায়পরায়ণ বাদশার দোয়া ও ৩. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে উঠিয়ে নেন এবং এর জন্য আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। আর আল্লাহ বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! বিলম্বে হলেও আমি অবশ্যই তোমাদের সাহায্য করব। (আহমদ : ৯৭৪৩; তিরমিজি : ৩৫৯৮)।
রোজাদারের জন্য প্রতিদিন ঘোষণা হয়, ‘কে আছ ক্ষমাপ্রার্থী, আমার কাছে ক্ষমা চাও। আমি ক্ষমা করে দেব।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে আল্লাহ তাআলা তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (বুখারি : ১৯০১; তিরমিজি : ৬৮৩)।
এক হাদিসে এসেছে, ‘রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’ বিশেষ করে শেষ রাত বেশি বেশি দোয়া ও ইস্তিগফারের সবচেয়ে উপযোগী সময়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আল্লাহ তাআলা নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন এবং ঘোষণা করতে থাকেন, কে আমাকে ডাকছ, আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছ রিজিকপ্রার্থী, আমি তাকে দান করব। কে আছ ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। (বুখারি : ১১৪৫; মুসলিম : ৭৫৮)। সুতরাং আমাদের কর্তব্য, বেশি বেশি নেক আমল এবং তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজেদের এই শাহি ফরমানের অন্তর্ভুক্ত করা। এসব ইবাদত পরিবারের লোকদের সঙ্গে নিয়েও করা যায়। আর ইফতারের সময়ও খুবই গুরুত্বসহকারে দোয়া করা চাই। এটি দোয়া কবুলের সময়। এ প্রসঙ্গে অন্য হাদিসে এসেছে : অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রতি রাতেই তা হয়ে থাকে। (ইবনে মাজাহ : ১৬৪৩)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের প্রতি দিবস ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন। (মুসনাদে আহমদ : ৭৪৫০; মুসনাদে বাজ্জার: ৯৬২)।
হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাসের প্রতিটি দিবস ও রজনীতে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রত্যেক মুসলিমের একটি দোয়া, যা সে করে কবুল করা হয়।’ (মাজমাউজ্ জাওয়াইদ)।
তাই আমাদের উচিত, রমজানের এ সুযোগগুলোকে কাজে লাগানো। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।