ভারতের আগ্রাসন মোকাবিলায় জনগণ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সৃষ্ট দূরত্ব কমানো এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য সাংবাদিক ও আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়তে সেনাবাহিনীকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের বিচারের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও জাতীয় ঐক্য জরুরি। আর এ ঐক্যের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্যোগ নিতে হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আমার দেশ-এর ঈদ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে একমাত্র নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছাড়া অন্য কোনো দলের অবস্থান সুস্পষ্ট নয়। জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে বড় দল হিসেবে বিএনপিকে সব দল নিয়ে বসে একটি ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। অনথ্যায় এর সুযোগ নেবে সাম্রাজ্যবাদী ভারত ও তার দোসররা।
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি জাতীয় ঐক্য গড়তে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্যোগ নিতে হবে। চীন সফর শেষে তিনি এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন বলে আশা করি।’
কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের বিষয়ে দেশের অভ্যন্তরে যে বিতর্ক চলছে, তা নিরসনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যাকারী এই দল পুনর্বাসনের কথার সঙ্গে আমি একমত নই। কেননা, অনেক আগেই এই দলের অপমৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের তিনবার মৃত্যু হয়েছে। সেই মৃত আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম হতে পারে কিন্তু পুনর্বাসন নয়।
মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতারা যদি অতীত কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবেই তো বিবেচনার জন্য বিষয়টি সামনে আসতে পারে। কিন্তু তারা ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাতের সাম্প্রতিক বক্তব্য শোনার পর মনে হয়েছে এই দলের জিনে সমস্যা আছে। ফলে তাদের ক্ষমা করার কোনো সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন করে আইন প্রণয়ন করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। তৃতীয়ত, গণভোটের মাধ্যমে দলটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। আমরা পথ দেখাতে পারি কিন্তু এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকেই ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে বড় দল হিসেবে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিতে হবে।’
আমার দেশ-এর সম্পাদকীয় নীতির বিষয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘মহান আল্লাহ এবং পাঠক ছাড়া আমার দেশ কাউকে ভয় পায় না। এই পত্রিকা কোনো জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করে না; বরং দেশ ও জাতির স্বার্থে ভূমিকা পালন করছে। ২০১৩ সালে যখন ভারতীয় বয়ান বাস্তবায়নে ঢাকা উত্তাল, তখন ফ্যাসিবাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ‘শাহাবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’ শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করেছিল। বর্তমানেও আমরা জাতির স্বার্থে ন্যায়সঙ্গত ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করছি। আমাদের এ অবস্থান অব্যাহত থাকবে।’
ঈদ সংখ্যার লেখকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো জাতির টেকসই উন্নয়নের জন্য আলাদা সাংস্কৃতিক ঐক্য জরুরি। এক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমানদের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের জন্য আমার দেশ ভূমিকা রাখছে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক ও যায় যায় দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, লেখক ও ইতিহাস গবেষক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, , কথাসাহিত্যিক ইউসুফ শরীফ, কথাসাহিত্যিক আতা সরকার, বাসসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রবীন সাংবাদিক গাজীউল হাসান খান, আমার দেশের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, আমার দেশ-এর সহযোগী সম্পাদক আলফাজ আনাম, ডিউইজের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, জবান সম্পাদক রেজাউল করিম রনি, কবি জাকির আবু জাফর,কবি শাহীন রেজা, কবি মনসুরুল আজিজ, সাহিত্যিক সালাউদ্দিন শুভ্র, প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আমার দেশ এর সাহিত্য সম্পাদক মুহিম মাহফুজ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা ফ্যাসিবাদের বয়ান ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমানকে বাঙালি মুসলমানদের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের জন্য অগ্রসেনাপতি উল্লেখ করেন।