লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চল কলাপাড়ায় বিগত ৫ দিন ধরে চলা অতি ভারী বর্ষণে রোপা আমনের ক্ষেত তলিয়ে গেছে পানির নিচে ফলে আমনের বীজ পঁচে যাওয়ার পথে। দুশ্চিন্তার ভাজ কৃষকদের কপালে।
গত মাসের শুরুতে টানা বৃষ্টিতে প্রায় ৮ কোটি টাকার শরৎকালীন শাক সবজি নষ্ট হয়েছে কলাপাড়া উপজেলার এমন তথ্য জানিয়েছিল কলাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা। এতে এ এলাকায় প্রায় ২ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে শুধু পানিতে থৈ থৈ করে। কোথাও কোন রোপা আমনের বীজ দেখা যায়না। আস্তে আস্তে পানি নামতে শুরু করছে তবে তা দ্রুত নামার ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।কৃষকদের অভিযোগ, খাল দখল আর এখানকার স্লুইসগেটগুলো দিয়ে পানি না নামতে পেরে আমাদের ক্ষতি বেশি হচ্ছে। পানি নামার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনে কৃষকেরা জোর দাবি জানিয়েছেন।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা বলেন, সংকট যেন তাদের পিছু ছাড়ছেনা। গত মাসে বৃষ্টিতে শরৎকালীন সবজি নষ্ট হয়েছে এখন আবার রোপা আমন নষ্ট হওয়ার পথে। মাঝখানে টানা বৃষ্টিতে বীজতলা তলিয়ে গেছে। ৩০০টাকা কেজি দরে বীজ ক্রয় করে রোপণ করছি। এখন এগুলো পঁচে গেলে আর সুযোগ থাকবেনা বীজ রোপন করা ফলে অনেক জমি অনাবাদিতে রুপান্তরিত হবে।
কৃষকরা আরো জানিয়েছেন, একদিকে যেমন সবজি নষ্ট হয়েছে আরেকদিকে তাদের রোপা আমন নষ্ট হওয়ার পথে পাশাপাশি
আগাম শীতকালীন সবজিও বীজ নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। কৃষকদের দাবী তারা যেন সরকারি সহায়তা পায়। সহায়তা পেলে আবার ঘুরে দাড়াতে পারবে ক্ষতি পুষিয়ে।
জানা গেছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছিল। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় থাকার ফলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ ছিল টানা। পুকুর খাল বিল তলিয়ে যাওয়ার ফলে এমন ক্ষতির মূখে এখানকার কৃষকেরা।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামের কৃষক মো. মাসুম বলেন, টানা বৃষ্টিতে আমার আমনের বিজ নষ্ট হয়েছে। এর আগে আমার বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে কেজি ৩০০ টাকা দরে কিনে কামলা দিয়ে রোপন শেষ করি কিন্তু এখন তাও নষ্ট হয়েছে।
দৌলতপুর গ্রামের মো.ইউসুফ হাওলাদার বলেন, বর্ষার শুরুতে আমরা ধাক্কা খাইছি। বৃষ্টি হলে টানা বৃষ্টি হয় না হলে মোটেই হয়না। এবারে টানা বৃষ্টিতে আমাদের আমনবীজ, সবজি নষ্ট হয়েছে। এবার টানা বৃষ্টিতে রোপা আমন নষ্ট হওয়ার পথে।
সবজি চাষি গোলাম মস্তফা বলেন, টানা বৃষ্টিতে আমার শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়েছে। দাঁড়াতেই পারিনা। কোন না কোন বিপদ লেগেই থাকে।
সবজি বিক্রেতা মো. ওমর ফারুক বলেন, সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। সবজি না থাকায় দাম বাড়ছে। এখন লাউ বিক্রি হয় ৭০/৮০ টাকায়, চিচিঙ্গা বিক্রি হয় ৬০ টাকা কেজি দরে, ঢেড়শ বিক্রি হয় ৫০ টাকা কেজিতে,করলা ৭০ টাকা কেজিতে যেটি বৃষ্টির আগে ছিল ৪০ টাকার মধ্যে।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আরাফাত হোসাইন বলেন, এবারের টানা বৃষ্টিতে উৎপাদিত সবজি, আমনের বীজ, রোপা আমনসহ শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়েছে। সব সময়ই আমরা কৃষকদের পাশে। ক্ষতি গ্রস্থ কৃষকদের আমরা সাধ্যমত সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব। পরামর্শ সব সময় দিয়ে আসছি এবং ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যা যা করনীয় তা করব।