বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ,সাবেক মন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চুক্তিকে ‘একপাক্ষিক’ দাবি করে বলছেন, ‘বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের গোলামি চুক্তির ফাঁদে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আওয়ামী লীগ’। এর ফলে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
তিনি আজ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরাম আয়োজিত ‘ভারতের সাথে অসম চুক্তি – বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের উপর হুমকি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় একথা বলেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এস এম নাজমুল হাসান। সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম ও ফরিদা ইয়াসমিন , ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. দেওয়ান সাজ্জাদ হোসেন,
এডভোকেট হেলাল উদ্দিন ,এডভোকেট পারভেজ হোসেন, অধ্যক্ষ এম এ মোনায়েম, এডভোকেট ইউসুফ আলী, শাহজান মিয়া সম্রাট প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
সেলিমা রহমান বলেন, ভারতের সাথে যত চুক্তি হচ্ছে সব গোপনে। জনগনতো জানেই না সংসদেও আলোচনা হয় বা। এসব অসম চুক্তি ও সমঝোতার নামে এদেশের প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার অংশে পরিণত করা হচ্ছে ,যা বাংলাদেশের জন্য খুবই বিপজ্জনক।”
তিনি অভিযোগ করেন, “স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের গোলামি চুক্তির গভীর ফাঁদে ফেলার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।”
“সরকার তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারত ও চীন উভয়ের সাথেই লুকোচুরি খেলছে” বলে দাবি করে সেলিমা রহমান বলেন, “যাদের বিমাতাসুলভ আচরণে তিস্তার ন্যায্য পানি থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে, তাদেরকেই তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত করলে তা হবে আত্মঘাতী।”
“বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারতকে ট্রেন চলাচলের সুযোগ করে দিলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রবীণ এ রাজনীতিক।
কাদের গনি চৌধুরী চুক্তির সমালোচনা করে বলেন, ভারতকে সব প্রকার সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ আদায় করতে পারেনি। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর নজরানা হিসেবে ভারতের কাছে সব কিছু সঁপে দিচ্ছে সেবাদাস সরকার। শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য এই অবৈধ সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলছে। সাম্প্রতিক ১০ সমঝোতা ও নথি সইয়ের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে তুলছে। তিনি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা স্বাক্ষর দেশের স্বার্থবিরোধী। অভিন্ন নদীগুলোর পানির হিস্যা না পেয়ে সমঝোতা সই করছেন।ফারাক্কার পানি আগে দরকার। ফারাক্কা চুক্তি অনুযায়ী ভারত পানি দিচ্ছে না।সরকার পানি চায় না,তিস্তা প্রকল্পের কাজ করতে চায় । কারণ, প্রকল্প হলে অনেক টাকা। মিলেমিশে লুটপাট করতে পারবে।সেই টাকাই তাদের আসল উদ্দেশ্য। এসব চুক্তিতে কোথাও এই হিস্যা নিয়ে একটা কথাও নেই। এ থেকে বোঝা যায়, আসলে এই সরকার দেশপ্রেমিক সরকার নয়, দেশবিরোধী সরকার।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে আমাদের মালিকানা কেড়ে নিতে চায় আগ্রাসী ভারত। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এক রায়ে বাংলাদেশ নতুন প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পেয়েছে । এর মধ্য দিয়ে নিজস্ব সমুদ্রসীমার বাইরে মহীসোপানে এক বিরাট এলাকার ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।এই এলাকায় মৎস্য আহরণ ও সমুদ্রের তলদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশের অধিকার নিশ্চিত হয়।
তিনি বলেন, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নির্ধারণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক মামলায় যথাক্রমে ২০১২ এবং ২০১৪ সালে প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জয়লাভ করে।
সেই রায়ে মহীসোপানের সীমানা আলাদাভাবে নির্ধারণ করার কারণে ২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সিএলসিএসে সংশোধনী জমা দেয়। ওই সীমানার ব্যাপারে আপত্তি দেয় ভারত।
যদিও বঙ্গোপসাগরের প্রতিবেশী আরেক দেশ মিয়ানমার বাংলাদেশের মহীসোপান দাবির ব্যাপারে কোনো আপত্তি করে নি। ভারতের আপত্তির ব্যাপারে আমি আইনগত জোরালো কোন ভিত্তি দেখছি না। কারণ আমাদের মহীসোপান আদালত থেকে ফয়সালা করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং ভারতের আপত্তির কোন আইনগত ভিত্তি নেই বলেই আমি মনে করি।কিন্তু বাংলাদেশ এর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছে আমাদের জানা নেই।
তিনি বিশেষজ্ঞ বরাত দিয়ে বলেন,আপত্তির যেসব পয়েন্ট ভারত তুলে ধরেছে, তার সঙ্গে মহীসোপানের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ পানির বিষয়ে আপত্তির সঙ্গে তো মহীসোপানের বিষয় মেলে না।
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা, সীমান্ত হত্যা, কানেক্টিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত রেল যোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগের সমঝোতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতা, ওষুধসংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ, ভারতের ইনস্পেস এবং বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, সমুদ্রবিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতাগুলোতে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভারতকে সব প্রকার সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ আদায় করতে শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। এটা রায়বিহীন অবৈধ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, জনগণকে অন্ধকারে রেখে চুক্তি ও সমঝোতা করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার। আপনারা জানেন বিশ্বব্যাপী যারা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তারাই রাষ্ট্র কে শাসন করতে পারে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশকে শাসন করে চলছে। দৈনিক আমার দেশ ও দিগন্ত টেলিভিশনকে বন্ধ করে গণমাধ্যমকে ভারত বিরোধিতার কারণে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। দেশের বুক চিরে রেল করিডোরের নামে ভারতকে আমাদের ভূখন্ড ব্যবহারে বাধা দিতে বুকে রক্ত ঢেলে দিতে হবে।