কেপিসি নিউজ ডেস্ক: আসছে ৫ জুন উপজেলা পরিষদের চতুর্থধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ত্রিমূখী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চতুর্মুখী লড়াইয়ের জন্য প্রস্ততি নিয়েছে প্রার্থী ও ভোটার সমর্থকরা। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী মাঠ যেনো ততই উৎতপ্ত হতে শুরু করেছে। চায়ের দোকানসহ প্রতিটি স্থানে এখন নির্বাচনের বাক-বিতন্ডা চলছে। যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে হিসেব কষছে সাধারন ভোটাররা।
সরেজমিনে নির্বাচনী মাঠ ঘুরে জানা যায়, চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গত ৯ মে কলাপাড়ায় চেয়ারম্যান পদে তিন জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিন জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চার জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যে কয়জন প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থানে শক্ত জায়গায় রয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব তালুকদার ইতোমধ্যে একবার উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী ও সাধারন ভোটারদের কাছে তার যথেষ্ট গ্রহন যোগ্যতা রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন তার সাথে রয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় এবারের নির্বাচনে তিনি এগিয়ে রয়েছেন বলে দাবী করেন অনেকে।
উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে অপর দুইজন প্রার্থী কৃষক লীগের সাবেক নেতা সৈয়দ আখতারুজ্জামান কোক্কা ও আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ড. অ্যাডভোকেট শামিম আল সাইফুল সোহাগ। এদের মধ্যে সৈয়দ আখতারুজ্জামান কোক্কা টিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি এর আগেও দুইবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। সেক্ষেত্রে তার যোগ্যতা ও ভোটারদের সহমর্মিতায় এবারের নির্বাচনে তিনি শতভাগ জয়ী হবেন বলে তার ভোটার ও সমর্থকদের প্রত্যাশা। অপরদিকে ড. অ্যাডভোকেট শামিম আল সাইফুল সোহাগ দীর্ঘদিন ধরে রাজনিতীর মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে তিনি পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য দোয়া প্রার্থনা করে আসছেন। তবে, এবার কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবেও তার সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে। এবারের নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
এদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক ইউসুফ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল আলম বাবুল ও পৌর কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. ইব্রাহীম খলিল লড়াই করছেন। এ তৃমূখী লড়াইয়েও প্রত্যেক প্রার্থী যার যার স্থানে সরব রয়েছেন। অধ্যাপক ইউসুফ আলী দীর্ঘ বছর ধরে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। নেতা-কর্মীদের অত্যান্ত বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। এ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন তার ভোটার ও সমর্থকরা। এদিকে, শফিকুল আলম বাবুল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক পদে দায়িত্বরত রয়েছেন। ছাত্র জীবন থেকে তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন। এছাড়া বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নির্বাচনের মাঠে তার গুরুত্বও কোন অংশে কম নয়। আরেক প্রার্থী আলহাজ্ব মো. ইব্রাহীম খলিল নিজগুনে ভোটার ও সমর্থকদের প্রিয় পাত্র। তিনি পৌর কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতি কলাপাড়া উপজেলা শাখা’র সভাপতি, রোগী কল্যাণ সোসাইটি’র সাধারন সম্পাদক ও নবজীবন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এবারের নির্বাচনে তিনি ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
এদিকে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শাহিনা পারভীন সীমা গত নির্বাচনে প্রায় দুই-তৃতায়ংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে এ পদে রয়েছেন। করোনা মহামারি থেকে শুরু করে যে কোন দূর্যোগে সবসময় জনগনের পাশে ঝাঁপিয়ে পরেছেন। বিশেষ করে বিগত বছরের কয়েকটি বন্যায় তার উপস্থিতি ও কার্যক্রম সাধারন মানুষের প্রসংশা কুড়িঁয়েছে। বন্যা কবলিত প্রতিটি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী বিতরনসহ তাদের খোঁজ খঁবর নিয়েছেন। এছাড়া, উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দুইবার তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে জনগনের সেবা দিয়েছেন। বিগত পাঁচ বছরে তার নামে কোন অনিয়ম বা দূর্ণীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এসকল দিক বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে আবারোও তাকে নির্বাচিত করবে এমনটাই আশা করছেন তার ভোটার ও সমর্থকরা।
এদিকে, নাজমুন নাহার মলি ভাইস চেয়ারম্যান পদে নতুন মুখ হলেও ক্ষমতাশীন দলের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে তার উপর। সেদিক বিবেচনায় বড় একটা ভোট ব্যাংক রয়েছে তার। এছাড়া, ধুলাসার ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা ইউপি সদস্য হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এসময় তিনি অত্যান্ত নিষ্ঠা ও আস্থার সাথে জনগনকে সেবা দিয়েছেন। তার সেবার পরিধিকে উপজেলা ব্যাপী পৌঁছে দিতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এ নির্বাচনে সে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন অনেকে। তবে, সে বিজয়ী হলে নারীদের অধিকার রক্ষাসহ অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে থেকে কাজ করবেন বলে অভিমত প্রকাশ করেন এ প্রার্থী।
অপরদিকে, অপর দুইজন প্রার্থী লাইজু হেলেন লাকি ও রাশিদা বেগম এর আগেও এই পদে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছেন। রাশিদা বেগম ২০১৪ ও অপরজন ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। সামান্য ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতে পারেননি। এরা দুজনেই পৌর মহিলা কাইন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এবার ভোটাররা তাদের মূল্যায়িত করে নির্বাচিত করবে এমনটাই আশা করেন তারা। লাইজু হেলেন লাকির মতে, এর আগেও দুইবার নির্বাচন করেছি। শেষের বার বিজয়ী হয়েও যে কোন কারনে পরাজয় শিকার করতে হয়েছে। এবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সে শতভাগ বিজয়ী হবেন। বিজয়ী হলে সরকারি সকল ধরনের বরাদ্ধের সুষ্ঠু বন্ঠনসহ গরীব, দুঃখী ও মেহনতি মানুষদের পাশে থাকবেন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১ লাখ ৪ হাজার ৩৭২ জন পুরুষ ভোটার, ১ লাখ ১ হাজার ৫০ জন নারী ভোটার এবং ৩ জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন।’ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসি সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলেও তিনি জানান।