কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ সন্তানদের মুখে দুবেলা ভাতের জোগান দিতেই পারিনা সেখানে ঈদের কথা ভাবি কি করে? স্বামী যেদিন আগুনে পুড়ে পৃথিবী থেকে চলে গেল সেদিন থেকেই দুঃখের সাগরে ভাসি। আমার এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে এখন কোন মতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। দিন যত পার হয় ততই চোখেমুখে অন্ধকার দেখি। সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে ছেলে মেয়েদের জীবন সেটা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা জানে। এভাবেই কথাগুলো বললেন রাজধানীর বেইলি রোডের খাবারের দোকান কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের আগুনে পুড়ে যাওয়া জুয়েলের স্ত্রী রেবা আক্তার। তিনি আরো বলেন, যে মানুষটির আয়ের উপর সংসার চলত সেই মানুষটির জীবন চলে যাওয়ার পর পুরো পরিবারে নেমে আসে আমাবস্যার কালো রাত। চোখে মুখে হতাশার ছাপ। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামিকে হারিয়ে দিশেহারা সাজানো গোছানো ছোট্ট আমাদের পরিবারটি। এদিকে পুত্রশোকে এখনো বারবার মূর্ছা যাচ্ছে মা। শোকে মূর্হ্যমান বাবা।
তথ্যমতে জুয়েল রানা নিজের ও পরিবাবের ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর জন্য বিগত ৭ বছর আগে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। বিভিন্ন যায়গায় কাজ করে পরিবারের হাল ধরেন। সর্বশেষ কর্মস্থান রাজধানীর বেইলি রোডের খাবারের দোকান কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে চাকুরী নেন। এ রেস্টুরেন্টেই জীবন দিতে হল কলাপাড়া উপজেলার মীঠাগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মধুখালী গ্রামের ৭০ বয়ষোর্ধ ইসমাইল গাজী ও ফাতেমা দম্পতির ছেলে জুয়েল গাজীর।
পরিবারের তথ্যমতে, নিহত জুয়েলের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় মেয়ে তাসলিম আক্তার জুয়েনা বয়স ৭ বছর। আর ২ বছরের ছোট্ট পুত্র সন্তান তাইফুর রহমান তাহমিদ। জীবনের একটি ঈদ বাবার সাথে কাটালেও এবার ঈদে আর বাবার সাথে কাটানো হলোনা। এ জীবনের তরে তাসলিম আক্তার জুয়েনা ও তাইফুর রহমান তাহমিদের বাবার ভালোবাসা ও ঈদের নতুন পোশাক পাবেনা।
মৃতের মামাতো ভাই সায়মন বলেন, পুরো পরিবারের দায়িত্ব ছিল জুয়েল ভাইর মাথায়। এখন তার দুটি সন্তান ও তার বৃদ্ধ বাবা মাকে কে দেখবে। তাদের আর্থিক সংকট অনেক। সরকার ও দেশের বৃত্তবানরা এগিয়ে এলে তার সন্তানরা অন্তত দু-মুঠো ভাত খেয়ে বড় হতে পারত।
গ্রামের ইউপি সদস্য কাওসার মুসুল্লি বলেন, জুয়েল অনেক ভালো ছেলে ছিল। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করত। আমরা চেষ্টা করবো সাধ্যমত ওর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে।
মিঠাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন খান দুলাল বলেন, পরিবারটি অসহায়। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে ছিল জুয়েল। ওই পরিবারে খোঁজ নিয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমি কলাপাড়ায় মাত্র কয়েকদিন হল যোগদান করেছি। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি এবং পরবর্তীতে যতদুর এ পরিবারের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করা যায় সেটা করা হবে।