মো. ওমর ফারুক: কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলা এবং মহিপুর থানা নিয়ে পটুয়াখালী-৪ আসনটি গঠিত। স্বাধীনতার পর থেকে মাত্র তিনটি সংসদ নির্বাচন ছাড়া বাকী নির্বাচনগুলোতে আওয়ামীলীগ দলের প্রার্থী এখানে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আসছে। তাই, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে ভোটের মাঠে লড়াইয়ের জন্য এ আসনে প্রায় এক ডজন প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। নমিনেশনের জন্য সকলেই চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। এদিকে, মাঠ গুছাতে ব্যস্ত রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিভিন্ন সভা সমাবেশ করে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এ দলটি। নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা ছিনিয়ে নিতে চান এ আসনটি। তবে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল জাসদের প্রার্থীরাও এ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।
জানা যায়, এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯১ হাজার ৭১৫ জন। এর মধ্যে কলাপাড়ায় ২ লাখ ২ হাজার ৩৮৩ জন। আর রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৮৯ হাজার ৩৩২ জন। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭৪১ জন এবং মহিলা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৭১ জন। এছাড়া তৃতীয় লীঙ্গের ৩ জন ভোটার রয়েছে। গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ৯০ হাজার ৭৭৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এ আসনে। তার বিপরীতে চারদলীয় জোটের বিএনপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৬০ হাজার ১২ ভোট। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী অধ্যক্ষ মো: মহিব্বুর রহমান রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আগামী সংসদ নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কার মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে নেতা-কর্মীদের নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন কলাপাড়া উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রি মো: মাহবুবুর রহমান, সাবেক এনএসআই, সাবেক এসএসএফ পরিচালক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) মো: হাবিবুর রহমান মিলন, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আনোয়ার-উল-ইসলামের পুত্র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কিমিটির সাবেক সহ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল-ইসলাম লিটন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আল সাইফুল সোহাগ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ সম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকার মিল্টন, সাবেক ছাত্র নেতা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ সভাপতি মুরসালিন আহম্মেদ, পটুয়াখালী জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিষ্টার জুনায়েদ হাসিব ও আ.লীগের কেন্দ্রিয় উপ-কমিটি’র সদস্য মো. বাসেদ সরদার। তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিয়ে নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন।
এছাড়াও প্রবীন ও ত্যাগী রাজনীতিবিদ হিসেবে এ আসন থেকে এবার আওয়ামীলীগের মনোয়ন নিয়ে ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহন করতে চান পটুয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি অধ্যক্ষ সৈয়দ নাসির উদ্দিন, কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব তালুকদার, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের নেতা আলাউদ্দীন আহমেদ ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের কেন্দ্রিয় যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ইঞ্জি: মো. নাসির উদ্দিন প্রমূখ।
অপরদিকে নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এ আসনের জন্য বিএনপি’র দুইজন প্রার্থী প্রস্তুত রয়েছে। তারা হলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এবিএম মোশাররফ হোসেন এবং কলাপাড়া উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাবেসক দলের সাবেক সহ-সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মনিরুজ্জামান মনির। ইতোমধ্যে নির্বাচনকে টার্গেট করে এ আসনে মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের তৃনমূল কাউন্সিলে সকল ইউনিটের নতুন কমিটি গঠনে বিএনপি এখন সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। বিভিন্ন মিটিং মিছিল ও সভা সমাবেশের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের উজ্বিবিত করে রাখছে এ দলটি। তবে, দলের স্বার্থে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তাকে বিজয়ী করতে সকলে এক হয়ে কাজ করবেন বলে তৃনমূলের নেতা কর্মীরা জানান।
এদিকে, পিছিয়ে নেই চরমোনাই পীরের হাত পাখা মার্কার দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীর বিজয় ছিনিয়ে এনে ইতোমধ্যেই একটা শক্ত অবস্থান তৈরী করেছে এ দলটি। তাদের একক প্রার্থী হিসেবে মুফতি হাবিবুর রহমান নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া জাসদ (ইনু) থেকে সাংবাদিক বিশ্বাস শিহাব পারভেজ মিঠু এ আসন থেকে ১৪ দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও, জাপা (এ) থেকে মনোনীত প্রার্থী বা তাদের কর্মী সমর্থকের তেমন কোন অস্তিত্ব নেই এখানে।